তাকওয়ার উপকারিতা

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫ সময়ঃ ৩:৪৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৪৬ অপরাহ্ণ

ধর্ম চিন্তা ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

Preaching Authentic Islam in Banglaতাকওয়া এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আল্লাহ তা‘আলা যার অসিয়ত তার পূর্বাপর সকল বান্দাকে করেছেন ও তা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা ‎আল্লাহকে ভয় কর।

আর যদি কুফরী কর তাহলে আসমানসমূহে যা আছে এবং যা আছে জমিনে সব আল্লাহরই। আর ‎আল্লাহ অভাবহীন, প্রশংসিত।” [সূরা নিসা: (১৩১)]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার উম্মতকে তাকওয়া গ্রহণ করার ‎নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে:‎ আবু উমামা সুদাই ইব্‌ন আজলান আল-বাহেলী বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিদায়ী হজে খুতবা ‎দিতে শুনেছি।

তিনি বলেন: “তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অর্জন কর, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় কর, তোমাদের ‎রমযানে সিয়াম পালন কর, তোমাদের সম্পদের যাকাত আদায় কর, তোমরা তোমাদের নেতাদের অনুসরণ কর, অতঃপর তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ কর।” অনুরূপভাবে তিনি যখন কাউকে যুদ্ধাভিযানের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করতেন, তাকে তিনি বিশেষভাবে নিজের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া গ্রহণ করা ও মুসলিমদের ব্যাপারে কল্যাণ ‎কামনা করার অসিয়ত করতেন।‎

আমাদের আদর্শ পূর্ব পুরুষগণ তাদের চিঠি-পত্র, বয়ান-বক্তৃতা ও মৃত্যুর সময় তাকওয়ার অসিয়ত করতেন। ওমর ‎ইবনে আব্দুল আযীয তার ছেলে আব্দুল্লাহকে লেখেন: “অতঃপর… আমি তোমাকে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার অসিয়ত ‎করছি, যার সাথে তোমাকে অবশ্যই সাক্ষাত করতে হবে, তিনি ব্যতীত তোমার কোন আশ্রয় নেই, তিনিই দুনিয়া-‎আখেরাতের মালিক।”

তাকওয়ার অর্থ: বান্দা যে জিনিসকে ভয় করে তার থেকে বাঁচা ও তার থেকে আড়াল হওয়ার ঢাল গ্রহণ করার নাম তাকওয়া।

আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার অর্থ: বান্দা যে জিনিসকে ভয় করে, যেমন আল্লাহর গোস্বা, শাস্তি ও অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচা ও তার থেকে সুরক্ষার জন্য আল্লাহর আনুগত্য করা ও তার নাফরমানি থেকে বিরত থাকা।
প্রিয় পাঠক, তাকওয়ার অর্থ আরো স্পষ্ট করার জন্য আমাদের মনীষীদের কিছু সংজ্ঞা আপনার সামনে পেশ ‎করছি:‎

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু তাকওয়া অর্জনকারী মুত্তাকীর সংজ্ঞায় বলেছেন: “মুত্তাকী তারা, যারা আল্লাহ ও তার শাস্তিকে ভয় করে।”‎

তালক ইবনে হাবীব বলেছেন: “তাকওয়ার অর্থ: আল্লাহর নির্দেশমতো তুমি তার আনুগত্য কর ও তার ‎সাওয়াবের আশা রাখ এবং তার নির্দেশমতো তার নাফরমানী ত্যাগ কর ও তার শাস্তিকে ভয় কর।”‎

ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর নিম্নের বাণী: “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ‎ভয়।” প্রসঙ্গে বলেন: তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা তার নাফরমানী না করা, আল্লাহকে স্মরণ করা তাকে না ভুলা, তার ‎‎শোকর আদায় করা তার কুফরী না করা।”‎

আপনি আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার ব্রত গ্রহণ করুন। মনে রাখুন তিনিই একমাত্র ভয় ও সম্মানের পাত্র। তাকে ‎আপনার অন্তরের মণি কোঠায় বড়ত্বের মর্যাদায় আসীন করুন। নিম্নে আমরা তাকওয়ার কতক ইহকাল ও আখেরাতের উপকারিতা উল্লেখ করছি, যা আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে তাকওয়া অর্জনে আগ্রহী করবে ও জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাদেরকে তাকওয়া গ্রহণে উৎসাহ দেবে। আল্লাহ সহায়।
প্রথমত: তাকওয়ার ইহকালীন উপকারিতা:‎

১. তাকওয়ার ফলে পার্থিব জগতে আল্লাহ মানুষের কাজগুলো সহজ করে দেন, তারা তাদের জরুরী প্রয়োজন সহজে সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:‎ “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা তালাক: (৪)] তিনি আরো বলেন: “সুতরাং ‎‎যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা ‎সুগম করে দেব।” [সূরা লাইল: (৫-৭)]

২. তাকওয়া পার্থিব জগতে মানুষকে শয়তানের সব অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:‎ “নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা ‎আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়।” [সূরা আরাফ: (২০১)]

৩. দুনিয়াবাসীর তাকওয়ার ফলে আসমান ও যমিনের বরকত উন্মুক্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:‎ “আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমিন ‎‎থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম।” [সূরা আরাফ: (৯৬)]‎

৪. বান্দা তাকওয়ার ফলে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করতে সক্ষম হয় ও তা বুঝার তাওফিক লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা ‎বলেন:‎ “হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন।” [সূরা ফুরকান: ‎‎(২৯)] ফুরকান অর্থ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যা পার্থক্য করার জ্ঞান।

তিনি আরো বলেন: “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি স্বীয় ‎রহমতে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেবেন, আর তোমাদেরকে নূর দেবেন যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে।” [সূরা ‎হাদীদ: (২৮)]‎

৫. তাকওয়া অর্জনকারী মুত্তাকী ব্যক্তি তার তাকওয়ার ফলে কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি পায় এবং এমন জায়গা থেকে রিযক লাভ ‎করে, যা তার কল্পনার ঊর্ধ্বে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:‎ “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন ‎যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” সূরা তালাক: (২-৩)‎।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G